করোনা: নতুন শনাক্ত ৯৫ জনের ৭৯ জনই ঢাকার – GalachipaProtidin.Com
করোনা: নতুন শনাক্ত ৯৫ জনের ৭৯ জনই ঢাকার – GalachipaProtidin.Com

দেশে ডেঙ্গু ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে। তবে সেই বছরের জুন মাসেও এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, যত রোগী চলতি বছরের জুনে এখন পর্যন্ত (২৪ জুন সকাল ৮টা) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছিল; বর্ষা শুরু হলে আগের সব হিসাবকে পেছনে ফেলবে- এমন আশঙ্কাই ছিল বিশেষজ্ঞদের। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে চলতি বছর ডেঙ্গুর ভয়ংকর অবস্থার দিকেই এগোচ্ছে দেশ।

বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়, কারণ এ সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই অবস্থা চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল।

চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় মে মাসের মাঝামাঝি থেকে, অথচ সেটা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন মৌসুম নয়। মে পার হয়ে জুন আসতে আসতেই ডেঙ্গুর বিস্তার শুরু হয়েছে। আর গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক রোগীর সংখ্যা ৩০০-এর বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০০ জন; যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০০ জন। যা চলতি মৌসুমে এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যায় রেকর্ড।

ভর্তি হওয়া ৫০০ জনের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ৪১৭ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩ জন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন এক হাজার ৫০৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে এক হাজার ১৫৯ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৩৪৪ জন।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ছয় হাজার ৮৩৯ জন। তাদের মধ্যে বাড়ি ফিরেছেন পাঁচ হাজার ২৯৪ জন।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।

বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশে। সে বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে শুরু হয় করোনা, কমে আসে ডেঙ্গুর প্রকোপ। রোগী শনাক্ত হয় এক হাজার ৪০৫ জন। তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন। এ ছাড়া ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন মোট ৬২ হাজার, আর সে বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ২৮১ জনের; যা সর্বোচ্চ মৃত্যু।

আগের সব হিসাব ছাড়িয়ে চলতি জুন

দেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বছরের প্রথম ছয় মাসে এত রোগী দেখা যায়নি। এমনকি যে বছর সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, সেই ২০১৯ সালের জুন মাসেও এত রোগী ছিল না। সে বছরের জুন মাসে রোগী ছিল এক হাজার ৮৮৪ জন আর মৃত্যু হয় সাতজনের। আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার হাজার ৮১৭ জন; এ মাসেই কেবল মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের।

এর আগে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭৩৭ জন, আর মৃত্যু হয় একজনের; ২০২১ সালের জুনে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২৭২ জন, মৃত্যু ছিল না, ২০২০ সালের জুনে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২০ জন, মৃত্যু ছিল না।

এ অবস্থায় খোদ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পাঁচগুণ বেড়েছে। মশা নিধন না হলে এ থেকে মুক্তি নেই।

চলতি মাসে রোগী বেড়েছে জ্যামিতিক হারে

অধিদপ্তরের হিসাব থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ছয়জন। ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় তিনজনের। মার্চে কারও মৃত্যু না হলেও হাসপাতালে ভর্তি হন ১১১ জন। এপ্রিলে ভর্তি হন ১৪৩ জন আর মৃত্যু হয় দুজনের। গত মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ৩৬ জন, মারা যান ২ জন।

কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে দেখা যায়, মাসের প্রথম সাত দিনে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৬৯৮ জন। এরপর ১১ জুনে এক দিনে ১৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে আগের মাস অর্থাৎ মে মাসের হিসাব ছাড়িয়ে যায়। সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়ায়; তার আগে ৩১ মে-তে রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ২ হাজারের ঘর।

তার দুই দিন পর অর্থাৎ ১৩ জুন প্রথম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। ঠিক তারপর দিন (১৪ জুন) আগের পাঁচ মাসের মৃত্যুর হিসাবকে পেছনে ফেলে দেয় ভয়ংকর জুন। সেদিন একজনের মৃত্যু হয়; তাতে মাসের প্রথম ১৪ দিন পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১৫ জনের, আর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২০০-এর ঘর।

১৫ জুন এক দিনে ২৮৫ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়ায়। ১৭ জুন প্রথমবারের মতো এক দিনে ভর্তি হয় ৪০০-এর বেশি রোগী; ৪৭৭ জন সেদিন ভর্তি হয়। এরপর থেকে রোগীর সংখ্যা আর ৩০০-এর নিচে নামেনি। ১৯ জুন ৩২৩ জন রোগী ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২২ জুন হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৬৯ জন, রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ছয় হাজারের ঘর।

মোট রোগীর সংখ্যার মধ্যে চলতি মাসের গতকাল (শনিবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার হাজার ৮১৭ জন।

প্রতিদিনের হিসাবের বাইরে কক্সবাজার

দেশে ডেঙ্গুর ভয়ংকর প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর নতুন হটস্পট কক্সবাজার। কক্সবাজারে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা কঠিন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনকার তথ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত বা মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়, সেখানেও রোহিঙ্গাদের তথ্য থাকে না। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাজমুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা কমিউনিটি যেহেতু আমাদের নাগরিক নয়, তাদের তথ্য আমরা একসঙ্গে আনি না। তবে যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গেই থাকে, জাতিসংঘও তাদের তথ্যটা চায়, সেহেতু গুরুত্ব দিয়েই আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করি এবং আলাদাভাবে হিসাব করি।

উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বলছে হাসপাতালগুলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে রাজধানী ঢাকায় তিন সরকারি হাসপাতাল; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৭৭৭ জন ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬১১ জন।

গত ৩১ মে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১০ তলার ১২০ বেডের ওয়ার্ডটিতে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে, রোগীতে ঠাসা হলেও সেদিনও কিছু আসন ফাঁকা ছিল। কিন্তু সেই হাসপাতালে এখন আরও ১২০ বেডের ওয়ার্ড করা হয়েছে, রয়েছে ১০০ বেডের শিশু ওয়ার্ডও।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘সব ওয়ার্ড রোগীতে ভরা। এক ওয়ার্ড থেকে বাড়িয়ে আরেকটি ওয়ার্ড করা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আরও ওয়ার্ড করতে হবে। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এখনো সামাল দিতে পারছি, তবে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের আলাদাভাবে ভাবতে হবে।’


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *