আজও চামড়া এসেছে পোস্তায়, জমজমাট বেচাকেনা – GalachipaProtidin.Com
আজও চামড়া এসেছে পোস্তায়, জমজমাট বেচাকেনা – GalachipaProtidin.Com

ঈদুল আজহার পরদিন শুক্রবার (৩০ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া এসেছে লালবাগের পোস্তা এলাকায়। এদিন দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোরবানি করা পশুর চামড়া আসতে থাকে। আড়তদাররা গতকাল দুপুর থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। এক মাস পর্যন্ত চামড়া কেনা হবে।

পোস্তায় ছোট আকারের গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের গরুর চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং বড় আকারের গরুর চামড়া ৯০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অধিকাংশ আড়তদার ছোট গরু এবং ছাগলের চামড়া কেনেননি। 

আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজ নারায়ণ ধর সড়কসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে তাতে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। পরে এসব চামড়া সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। 

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেছেন, ঈদের পরের দিনও ঢাকা শহর ও এর আশপাশে কিছু পশু কোরবানি হয়। সে চামড়াগুলো আসছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আনবেন, তত ভালো। আমরা আগেও বলেছি, চামড়া কেনার সময় যেন ভেবে-চিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেবো।

এ বিষয়ে জামান অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জামাল বলেন, আজ যে হারে চামড়া আসছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, ঈদের দ্বিতীয় দিনে অনেক পশু কোরবানি হয়েছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এ বছর চামড়ার দাম ভালো। 

মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মজিদ ভ্যানে করে ২৫টি চামড়া এনেছেন। তিনি বলেন, একেবারে ছোট চামড়ার দাম ৫০০, মাঝারি চামড়ার দাম ৮০০ এবং বড় চামড়ার দাম ৯৫০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছে। এবার দাম ভালো পেয়েছি। কিন্তু, আমরা চামড়া কিনতে পারি না মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য। তারা আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া চায় এবং লোকজনও মাদ্রাসায় চামড়া দান করে দেয়।  

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, অধিক গরম ও অধিক বৃষ্টি দুটোই কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে বাধা সৃষ্টি করে। গরম ও বৃষ্টি কাঁচা চামড়ার শত্রু। এবার কোরবানির ঈদে অধিক বৃষ্টি এবং বৃষ্টি কমলে ভ্যাপসা গরম দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ১০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হতে পারে। তবে, এর বেশি হলে ব্যবসায়ীদের জন্য বিপদ হবে। অধিক রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয় কাঁচা চামড়া। তারপরও মানুষকে সচেতন হতে হবে। ১০ শতাংশ নষ্ট হলেও কোনোরকম টিকে থাকবে। এর বেশি হলে সবাইকে পথে বসতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ সালে পোস্তায় মোট ২০৭টা আড়ত ছিল। এখন এটা কমতে কমতে ৬০টায় দাঁড়িয়েছে। মানুষ করোনায় ও বৈশ্বিক মন্দায় ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার সাভার ট্যানারির পাশে চলে গেছে। আমরা ১ লাখ চামড়া কিনব। ইতোমধ্যেই টার্গেটের ৭০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। আমরা সমস্যায় আছি। সরকার যদি সাভার ট্যানারির পাশে একটি চামড়া কেনাকাটার পল্লী করে দিতো, তাহলে ভালো হতো। 

এ বছর সরকার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছাগলের চামড়ার দাম গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে।  

এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করে দাম কমানোর জন্য গেম খেলে, তাহলে আমরা চামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমতি দেবো। আমরা চাই না সেটা হোক। এ বছরও আমাদের ঘোষণাটি হলো, কারসাজির মাধ্যমে দাম কম দেওয়া বা চামড়া না নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেবো।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিনে সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদি পশু কোরবানি করা হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এসব চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি সরবরাহ মেলে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের ও ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।  


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *