ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও প্রতিকার – GalachipaProtidin.Com
ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও প্রতিকার – GalachipaProtidin.Com

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও প্রতিকার


২০২৩ জুলাই ০২ ০০:০৪:০৫

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও প্রতিকার

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার


চিকিৎসকের কাছে কে না যান ? ভালো চিকিৎসক যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছেে খারাপ চিকিৎসক। ভুয়া চিকিৎসকের কথাও শোনা যায়। অপচিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার খবরও নতুন নয়। ঠিকমতো অপরাশেন করতে না পারায় নবজাতক শিশুর মাথা কেটে মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যায় কখনো কখনো। ভুল চিকিৎসায় অনেকের অকালে মত্যু হয়। হাসপাতালে তালা লাগানো হয়। কখনো কখনো হাসপাতালে ভাঙচুর পর্যন্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা চিকিৎসকদের মারধর পর্যন্ত করেন। মামলা-মোকদ্দমাও হয়। চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতির অভিযোগ আমাদের দেশে নতুন নয়। সম্প্রতি রাজধানীর সেন্ট্রোল হাসপাতালে নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই ঘটনার মামলায় কয়েকজন চিকিৎসককে গ্রেফতারও করা হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২১ শে জুন রাতে রাজধানীর শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আরও একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নজির খুব কম।

রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে চুক্তি : একজন চিকিৎসকের কাছে একজন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসলে লিখিত থাকুক বা না থাকুক উভয়ের মধ্যে একটি অলিখিত সুনির্দিষ্ট চুক্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে অর্থের বিনিময়ে বা বিনিময় ছাড়াই সেবা প্রদানের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের অবহেলার কারণে যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এ বিষয়ে তাঁর আইনি প্রতিকার লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়।

চিকিৎসায় অবহেলা কি : আইনি পরিভাষায় ‘মেডিকেল নেগলিজেন্স’ বা চিকিৎসায় অবহেলা বলতে মূলত চিকিৎসক ও রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত অন্য ব্যক্তিদের অবহেলাকেই বোঝায়। চিকিৎসায় অবহেলা শুধুই ‘অপারেশন’ বা অস্ত্রোপচারসংশ্লিষ্ট নয়। এর বাইরেও রোগীকে সঠিকভাবে পরীক্ষা না করা, রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, ফি নিয়ে দর-কষাকষি, ভুল ওষুধ দেওয়া, মৃত রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা, রোগীর ওপর জোর খাটানো, রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে অন্যত্র প্রেরণ করা, আইনি জটিলতার কথা ভেবে চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফেলে রাখা, হাসপাতালের শয্যা খালি না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা না দেওয়া, স্বাস্থ্যগত বিষয়ে ভুল রিপোর্ট দেওয়া এগুলোও চিকিৎসা অবহেলার অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণসহ অনেক বিষয়ে ‘দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিস্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’-এ নির্দেশনা রয়েছে।

চিকিৎসায় অবহেলায় আইনী প্রতিকার : বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার উন্নয়ন সাধনকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনি কাঠামো এবং বাংলাদেশের আদালতের বিভিন্ন বিচারিক সিদ্ধান্তে এটি বর্তমানে সুপ্রতিষ্ঠিত যে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অধিকার মূলত জীবনের অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং আইনগত প্রতিকারের জন্য বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ও একক কোনো আইন কার্যকর নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন আইনে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে আইনি প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। সংবিধানের ১০২ অনু্চ্ছেদের আলোকে উচ্চ আদালতে রিট করারও সুযােগ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক চাহিদার মধ্যে ‘স্বাস্থ্য’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৮ অনুচ্ছেদে জনগণের পুষ্টিমান এবং ‘গণ-স্বাস্থ্য’ সুরক্ষার কথা সন্নিবেশিত হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩২-এ বর্ণিত ‘জীবন রক্ষার অধিকার’ একটি সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য। চিকিৎসায় অবহেলা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যর্থতা এই জীবন রক্ষার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে। এছাড়া ১৮৬০ সালের প্রণীত দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারানুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি বেপরোয়া বা অবহেলামূলক কাজের মাধ্যমে কারও মৃত্যু ঘটায়, তাহলে সেটি ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। দণ্ডবিধির ৩১২ থেকে ৩১৪ ধারায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গর্ভপাত ঘটানো একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দণ্ডবিধির ২৭৪, ২৭৫ ও ২৭৬ ধারায় যথাক্রমে ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জামে ভেজাল মেশানো, ভেজাল ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রি এবং এক ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম অন্য নামে বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। এসব অপরাধ দমন ও আইনি প্রতিকার প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের মাধ্যমে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় এবং শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।

১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ১৯ ধারা অনুসারে কারও অবহেলাজনিত কাজের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি স্থানীয় দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি মামলা করতে পারেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুসারে কোনো রোগী ফির বিনিময়ে ডাক্তার, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবা গ্রহণ করলে তিনি ‘ভোক্তা’ হিসেবে গণ্য হবেন এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত অবহেলার শিকার হলে ভোক্তা অধিকার আইনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে অভিযোগ করতে পারবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার যদি রোগনির্ণয়ে ভুল বা অবহেলা করে, ফলে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা যদি সেবা প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে, তাহলে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করা যাবে। এই আইন অনুসারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযোগকারী আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্য হবেন।

চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসেবার মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বা বিএমডিসি। কোনো চিকিৎসকের বা স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের অবহেলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় অবস্থিত বিএমডিসিতে অভিযোগ করা যায়। মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০–এর ধারা-২৩ অনুসারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতা বিএমডিসির রয়েছে। উল্লিখিত আইনগুলো ছাড়াও আরও কিছু আইনে চিকিৎসা ও ওষুধসংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকারের বিধান আছে যেমন ড্রাগস অ্যাক্ট, ফার্মাসি অর্ডিন্যান্স, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স, মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন ইত্যাদি।

স্বাথ্য সেবা গ্রহীতাদের প্রতি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব অবহেলা এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষা উভয় বিষয়ের আইনি প্রতিকার বিধানের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন নামে একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল। সর্বশেষ এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল যা এখনো কার্যকর হয়নি। আইনটির মাধ্যমে ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স আইনটি রহিত ও প্রতিস্থাপিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খসড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহেলা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিকে হুমকি প্রদান, ভীতি প্রদর্শন, দায়িত্ব পালনে বাধাদানসহ যেকোনো ধরনের অনিষ্ট সাধন বা স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে সেটিও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই আইনের খসড়া ২০১৪ সাল থেকে শুরু হলেও চিকিৎসক সমাজ এই আইনের বিষয়ে বিভিন্ন আপত্তি উত্থাপন করে আসছেন এবং এটি আজও চূড়ান্ত আইন হিসেবে কার্যকর করা যায়নি। চিকিৎসায় অবহেলা প্রতিরোধ এবং রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও বাস্তবতা : সরকারি হাসপাতালের চিকৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের প্রতিই আগ্রহ বেশি। কাঁচা টাকার লােভে অনেক সময় সরকারি হাসপাতালের কাজ ফেলে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকেন তারা। সিনিয়র ডাক্তার হলেতো কথাই নয়। দলীয় তকমাওয়ালা চিকিৎসকরা অনেকটা আইন-আদালতের বাইরে। তারা একপ্রকার ধরােছােয়ার বাইরে। তারা দিনের পর দিন কাজে অনুপস্থিত থেকে প্রাইভেট প্যাকটিস চালিয়ে যান । ডাক্তারদের অতি আগ্রহ এবং যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি গজিয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৮২ সালে প্রণীত হয় মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স। তবে এই আইনের উদ্দেশ্য খুব সামান্যই পূরণ হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী লাইসেন্সবিহীন প্রাইভেট ক্লিনিক স্থাপন অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। লাইসেন্স পাওয়ার শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সুব্যবস্থা, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং অস্ত্রোপচার ও ডাক্তারি পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা। এই আইনের আওতায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে শুরু করে ক্লিনিক, ল্যাব, হাসপাতাল প্রভৃতির লাইসেন্স প্রদান করা, মান নিয়ন্ত্রণ করা, পরিদর্শন করা এবং অনিয়ম দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব। এমনকি এই আইনের অধীনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রভৃতির অব্যবস্থাপনার জন্য আদালতে মামলা করার ক্ষমতা একমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে।

চিকিৎসকদের ‘দায়মুক্তি’

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। কখনো কখনো জীবন বাঁচাতে অনুমতি ছাড়াই তাদের অপারেশন করতে হয়। করুনা মহামারিতে চিকৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে অনেক চিকিৎসক মারাও গেছেন। চিকিৎসকরা রোগীর প্রতি অবহেলা করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করেই তাঁরা সাধারণত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার পরও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার জন্য চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে দায়ী করার সুযোগ নেই। অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে একই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক যদি চিকিৎসায় অবহেলা হয়নি এমন মতামত দেন, তাহলে সে মামলা থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক সহজেই অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।

জ্যাকব ম্যাথিউস বনাম পাঞ্জাব মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘অনেক সময় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয় অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সমাজের স্বার্থে আইনের এ অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসকদের মিথ্যা মামলার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।.তাই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার সুস্পষ্ট অভিযোগ না থাকলে অযথা মামলা করে হয়রানি করা থেকে সবার সতর্ক থাকা উচিত। চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি যেমন কারও কাম্য নয়, তেমনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে ভয়ভীতি ছাড়া স্বাধীনভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বালাচন্দ্র তমান পার্থে বনাম মহারাষ্ট্র রাজ্য মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ৩০৪ক ধারায় কারাদণ্ড দিতেই হবে এমন কোন কথা নেই। আদালত ইচ্ছা করলে কারাদণ্ড, বা অর্থ বা উভয় দণ্ড দিতে পারেন। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৯২ ধারানুসারে সরল বিশ্বাসে কোনো ব্যক্তির উপকার করার উদ্দেশ্যে চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা প্রদান করলে এবং এর ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।

লেখক : অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কন ইনস এর সদস্য ও আন্তর্জাতিক আইনের গবেষক।

পাঠকের মতামত:


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *