বছর ঘুরলে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। সেই সঙ্গে রয়েছে লোকসভা ভোট। রাজনীতির এই জোড়া যুদ্ধের আগে তিনি কিছু একটা যে করতে চলেছেন, তা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই জল্পনা দানা বেঁধেছিল মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। রবিবার আচমকাই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মহা-রাজনীতিতে চমক দিলেন এনসিপি (ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি) নেতা অজিত পওয়ার। রবিবার দুপুরে অনুগামী বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে একনাথ শিন্ডে-বিজেপি সরকারের সঙ্গে হাত মেলালেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের ভাইপো। শপথ নিলেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। অজিতের এ হেন পদক্ষেপে এনসিপি-র অন্দরে আবার ‘ঘর ভাঙার’ ছবি প্রকাশ্যে এল।
‘কাকা’ শরদের সঙ্গে তাঁর ‘ভাইপো’ অজিতের অম্লমধুর সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। অতীতেও একাধিক বার শরদকে ‘বিপদে’ ফেলেছেন অজিত। বিদ্রোহের শুরু সেই ২০১৯ সালে। সে বছর অক্টোবর মাসে বিজেপিকে সমর্থন জানিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন অজিত। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফডণবীস। তবে সেই সরকার বেশি দিন টেকেনি। কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপি জোট বেঁধে ‘মহাবিকাশ আঘাডী’ সরকার তৈরি করে মহারাষ্ট্রে। এর পর, আবার অবস্থান বদলে ‘কাকা’র শিবিরে ফিরেছিলেন অজিত।
আরও পড়ুন:
২০২২ সাল পর্যন্ত ‘মহাবিকাশ আঘাডী’ সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী পদেই ছিলেন অজিত। কিন্তু গত বছর জুন মাসে শিবসেনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরকার ফেলে দেন একনাথ শিন্ডে। সেই সময় থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব ‘ভাইপো’র হাতে তুলে দেন শরদ। তখন শিন্ডেদের সঙ্গে অজিত হাত মেলাতে পারেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল, যদিও সেই সময় তেমনটা ঘটেনি।
মাঝেমধ্যেই কাকা-ভাইপোর সম্পর্কের সমীকরণ বার বার আলোচিত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নতুন করে ওই সম্পর্কের ‘চিড়’ ধরা পড়েছিল। বিজেপি-শিন্ডে সরকারকে অজিত সমর্থন জানাতে পারেন— এমনই জল্পনা জল-হাওয়া পেয়েছিল সে রাজ্যের রাজনীতিতে। এই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল, যখন এনসিপির একাধিক কর্মসূচিতে গরহাজির থাকতে শুরু করলেন অজিত। ওই সময় অজিতের বিভিন্ন বক্তব্য বেশ ইঙ্গিতবাহী ছিল। কখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছেন, আবার শিন্ডের সরকারকে সহজে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন অজিত। একই সঙ্গে পওয়ারের ‘ভাইপো’ জানিয়েছিলেন, তিনি কখনওই এনসিপি ছেড়ে যাবেন না।
Advertising
Advertising
অজিতকে নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মে মাসে আচমকা এনসিপির সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন শরদ। ভাইপোর কারণেই কি দলীয় সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পওয়ার? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল সেই সময়। যদিও তিন দিন পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠেন শরদ।
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই জুন মাসে কন্যা সুপ্রিয়া সুলে এবং প্রফুল্ল পটেলকে দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি পদে নিযুক্ত করেন পওয়ার। উল্লেখযোগ্য ভাবে দলীয় কোনও পদ পাননি অজিত। সেই সময় প্রকাশ্যে দলীয় পদ চেয়েছিলেন অজিত। এ-ও জানিয়েছিলেন, তিনি আর বিরোধী দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে চান না। এই ঘটনায় ‘কাকা’র সঙ্গে ‘ভাইপো’র সম্পর্কের ‘তিক্ততা’ আরও প্রকট হয়েছিল। তার পরই নতুন করে অজিতের ‘বিদ্রোহ’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেই জল্পনার যবনিকা পতন ঘটিয়ে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে শোরগোল ফেলে দিলেন পওয়ার-ভাইপো। ঠিক এক বছর আগে জুন মাসে শিবসেনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে মহারাষ্ট্রে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন শিন্ডে।
আরও পড়ুন:
অজিতের এ হেন পদক্ষেপে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনও মুখ খোলেননি পওয়ার। তিনি পুণেতে রয়েছেন। যদিও শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে পওয়ারের কথা হয়েছে। রাউত বলেছেন, ‘‘শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি শক্তিশালী। মানুষের সমর্থন রয়েছে আমাদের সঙ্গে। উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে আমরা আবার নতুন করে সব গড়ব।’’’ তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, অজিতের এই পদক্ষেপের কথা ‘জানেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন পওয়ার। রবিবার অজিত-সহ ন’জন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছগন ভুজবল, দিলীপ ওয়ালসে পাটিলের মতো এনসিপি নেতারা। দাবি করা হয়েছে, এনসিপি-র ৫৩ জন বিধায়কের মধ্যে ৪৩ জনের সমর্থন রয়েছে অজিতের।
বিজেপিকে সমর্থন জানাতে পারেন বলে অজিতকে নিয়ে আলোচনা চলছিলই। সেই সময় পওয়ারের এক পদক্ষেপ ঘিরেও জল্পনা ছড়িয়েছিল মহা-রাজনীতিতে। মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের বাড়িতে গিয়ে আধ ঘণ্টা বৈঠক করেছিলেন পওয়ার। যদিও এই সাক্ষাতের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করেছিল শিন্ডের শিবসেনা শিবিরের জোটসঙ্গী বিজেপি। সাক্ষাতের কথা নিজেই টুইট করে জানিয়েছিলেন পওয়ার। প্রবীণ রাজনীতিক জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ মুম্বইয়ের বিখ্যাত প্রেক্ষাগৃহ ‘মরাঠা মন্দির’-এর ৭৫তম বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে শিন্ডের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। অজিতের ‘বিদ্রোহ’-এ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে শুরু হয়ে গেল নানা জল্পনা-কল্পনা।
Source link