অদ্ভুতুড়ে রানআউট | স্পোর্টস | দেশ রূপান্তর – GalachipaProtidin.Com
অদ্ভুতুড়ে রানআউট | স্পোর্টস | দেশ রূপান্তর – GalachipaProtidin.Com

সংসদের বাইরে থাকা বড় বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলন ও বিদেশিদের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আসছেন। বিষয়টি যে কথার কথা নয়, সেটাও আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে বারবার আলোচনায় আসছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারা-জেতার চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনকেই এবার গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সরকারের অধীনে বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। কারণ, তার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু করে নজির স্থাপন করতে চান ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০১ সালে দেশের ইতিহাসে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতার রাজনীতিতে নজির স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, এবার তিনি তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করে ইতিহাসে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে দাবি, টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা মিথ্যা প্রমাণ করতে চান। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করতে চান প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তার বাস্তবায়নও তিনি করেন। এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সমাদৃত হতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

২০১৪ সালে বিএনপি ও তার মিত্ররা বর্জন করায় একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ওই সময় বিদেশিদের মধ্যস্থতায় দেনদরবার হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি অনড় থাকায় তা ভেস্তে যায়। ২০১৮ সালে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। ওই নির্বাচন সবাই অংশ নিলেও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যরা সংসদে যোগ দেয়। তবে এরপর বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপিসহ বিরোধীরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে সরকার নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পক্ষে। সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধানের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য দেশে-বিদেশে যে কথা দিয়েছেন সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। নিজের দলকে বিজয়ী করার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তার সরকার সবকিছু করতে বদ্ধপরিকর।

এ নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন আগামী নির্বাচন আগের মতো হবে না। সুতরাং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের সক্ষমতা যার আছে তাকেই মনোনয়ন দেবেন তিনি।

দলের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব তা প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করতে চান। ভোট নিয়ে সব মহলের সব আশঙ্কা দূর করে প্রমাণ করতে চান আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের কল্যাণে সবসময়ই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। নির্বাচনে না এসে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দেশি-বিদেশি যারা অভিযোগ তুলছেন তাদের সবার কাছে প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিয়ে চলেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে।

ওই দুই নেতা আরও বলেন, ইতিপূর্বে কখনোই শেখ হাসিনা নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে এতটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। তাদের দাবি, হারা-জেতার চেয়েও চ্যালেঞ্জের জবাব দিতেই বেশি মনোযোগী তিনি। যেকোনো মূল্যে তিনি তার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দিকেই বেশি নজর বঙ্গবন্ধুকন্যার।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর তিন নেতা বলেন, শেখ হাসিনা নিজেও দলের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, হারা-জেতার চেয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার যে চ্যালেঞ্জ জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলে তিনি দিয়েছেন সেটাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ তিনি যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করবেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটা মহল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে জানিয়ে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।

দলের গত কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারলে জনগণ নৌকাকেই আবারও ভোট দেবে। তাই ভোটারদের দরজায় যেতে, বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন, লুটপাট জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওই সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, সত্যটা তুলে ধরেই বিএনপির মিথ্যাচার মোকাবিলা করতে হবে।

আগের মতো নির্বাচন হবে এটা মনে করে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বসে থাকলে কোনো লাভ হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে তাদেরই যাদের জনগণের ও নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি এবার কাউকে জেতানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধে নেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু ভোট করবেন বলেই দলীয় প্রধান নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করে তিনি তার কথা রাখবেন। তাতে দল ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জিতে আসার যোগ্যতা আছে যাদের তাদেরই মনোনয়ন দেবেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত দুবারের সংসদ নির্বাচন বিএনপি বিতর্কিত করতে চেয়েছে। কখনো নির্বাচন বর্জন করেছে, কখনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঝপথে সরে দাঁড়িয়েছে। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’

রাজ্জাক বলেন, এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে কথা দিয়েছেন দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। তিনি তা প্রমাণ করবেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আশা করব, বিএনপি গত দুটি নির্বাচন যে ভুল করেছে, এবার সে ভুল করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অঙ্গীকার করেছেন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষই হবে।’

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন অঙ্গীকার করলেও বিএনপি তা আমলে না নিয়ে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচার করছে। বিএনপি নির্বাচনে না এসে বানচাল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর পরিণতি বিএনপিকেই বহন করতে হবে।’


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *