‘বাংলাদেশিদের আবেগ দেখে আমি অভিভূত’ – GalachipaProtidin.Com
‘বাংলাদেশিদের আবেগ দেখে আমি অভিভূত’ – GalachipaProtidin.Com

৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম মহানায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলপোস্টের নিচে তার শৈল্পিক নৈপুণ্যের স্মৃতি বাংলাদেশের ভক্তদের হৃদয়ে আজও অমলিন। সেই তিনি কয়েক ঘণ্টার অতিথি হয়ে এলেন ঢাকায়। সোমবার মাত্র ১১ ঘণ্টার ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন মার্তিনেজ। কিন্তু তার দেখা পেলেন না ফুটবল অনুরাগীরা।

অনেকে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন টেলিভিশনের পর্দায় মহাতারকাকে দেখে। ভোর সাড়ে ৫টায় মার্তিনেজ ঢাকায় আসছেন, তা আগেই জানা গিয়েছিল। সকালে কিছু সমর্থককে দেখা গেল বিমানবন্দরে। অনেকেই হোটেল ওয়েস্টিনের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। গাড়ির কাচের ফাঁক গলে যদি একনজর দেখা যায় প্রিয় নায়কের মুখ। তবে মার্তিনেজের আঁটোসাঁটো শিডিউলের কারণে ভক্তদের আশা পূরণ হয়নি। গণমাধ্যমকর্মীরাও মার্তিনেজের সাক্ষাৎ পাননি।

এদিকে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের গোলরক্ষক মার্তিনেজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ফুটবল বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে অবদানের জন্য আর্জেন্টিনার এই ফুটবলারের প্রশংসা করে বলেন, আপনি সেই ব্যক্তি, যিনি আর্জেন্টিনার জন্য গৌরব নিয়ে এসেছেন। আমি আপনার সাফল্য কামনা করি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল এবং বাংলাদেশিরা এই খেলার অনুরাগী। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবার একটি ক্রীড়াপ্রেমী পরিবার উল্লেখ করে বলেন, আমার বাবা ও দাদা ফুটবলার ছিলেন। তিনি জানান, ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রসারে তার সরকার সারা দেশে মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করছে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার প্রচুর ভক্ত রয়েছে জেনে অভিভূত হয়েছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। তিনি বলেন, আমি এখানে এসে খুব আনন্দিত এবং ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশিদের আবেগ দেখে খুশি।

৩০ ঘণ্টা ভ্রমণ করে ঢাকায় মার্তিনেজ : ভোর ৫টা ১০ মিনিটে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে ঢাকায় আসেন মার্তিনেজ। আমস্টারডাম থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন মার্তিনেজ। সব মিলিয়ে ভ্রমণ করেছেন ৩০ ঘণ্টারও বেশি।

ফান্ডেড নেক্সটের অফিসে : ঘণ্টাকয়েক বিশ্রাম নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় উত্তর বাড্ডায় তার পৃষ্ঠপোষক ফান্ডেড নেক্সটের বাণিজ্যিক অফিস পরিদর্শন করেন। মার্তিনেজকে বাংলাদেশে এনেছেন তারা। আয়োজকরা মার্তিনেজকে বরণ করে নিতে সংসদ-সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় মার্তিনেজ বাড্ডার অফিসে প্রবেশ করেন।

মাশরাফির সঙ্গে সাক্ষাৎ : আর্জেন্টাইন এই মহাতারকার সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট সময় কাটিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। মার্তিনেজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উচ্ছ্বসিত মাশরাফি বলেন, কোপা আমেরিকা থেকেই আমি পছন্দ করি মার্তিনেজকে, যেখানে তিনি টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিও পেলেন দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারের পর মনে হয়েছিল, হয়তো আরেকটি বিশ্বকাপও হতাশায় শেষ হবে মেসিদের। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।

প্রিয় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার মার্তিনেজকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে মাশরাফির আনন্দ যেন শেষই হতে চায় না, ‘বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে। সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত মানুষের কত বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন তারা, যেদিন তার ওই হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল। আজ তিনি সাক্ষৎকারের মধ্যেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখালেন, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিলেন যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য আমার মনে হলো, আসলে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপটা তো মার্তিনেজের ওখানেই জিতে নিয়েছে।’

মার্তিনেজের সঙ্গে দেখা করার জন্য দুদিন নাকি ঘুমাতে পারেনি মাশরাফির ছেলেমেয়েরা। সেই প্রসঙ্গ টেনে ম্যাশ বলেন, ‘এমি আসছেন শুনে দুটি দিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না ছেলে-মেয়েরা। এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়। সে এতটা আন্তরিকতা দেখাল, এককথায়-অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মার্তিনেজ। এ সময় পলকের দুই ছেলে ও স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। পলক তার নিজের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মিডিয়াকে বলেন,? ‘জায়েদ ও গালিব (ফান্ডেড নেক্সেট কর্মকর্তা) আমার কাছের ছোট ভাই। তারা আইটি সেক্টর নিয়ে কাজ করে। ২৬ জুন মার্তিনেজের ঢাকায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা আমাকে জানায়। আমি ছয় বছর বয়স থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই সপরিবারে চলে এসেছি মার্তিনেজকে দেখতে।’

বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপারকে ঢাকায় আনলে হয়তো অনুপ্রেরণা পাবেন দেশের ফুটবলাররা। অথচ মার্তিনেজের সান্নিধ্য পেলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি। এ নিয়ে পলক বলেন, ‘মাশরাফি নিজেও একজন আর্জেন্টিনার সমর্থক। এখানে আসলে জায়েদ ও গালিবের ঘনিষ্ঠজনরাই আমন্ত্রিত হয়েছে।’

ইংরেজিপটু মার্তিনেজে মুগ্ধ পলক : লাতিন আমেরিকার ফুটবলাররা স্প্যানিশ ভাষায় পারদর্শী। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব অ্যাস্টনভিলায় খেলার সুবাদে ইংরেজিতেও পটু মার্তিনেজ। এই আর্জেন্টাইন গোলকিপারের ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে পলক বলেন, ‘তিনি (মার্তিনেজ) যখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুরু করেন, তখন ক্যামব্রিজে একটি ইংরেজি কোর্স করেছিলেন। তাই সুন্দর ইংরেজি বলেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার ছলে সাক্ষাৎকার হয়েছে। ফান্ডেড নেক্সটের কো-ফাউন্ডার জায়েদ ও গালিব এবং আমি মিলে মার্তিনেজের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।’ কী ছিল সেই সাক্ষাৎকারে, সেটাও বললেন প্রতিমন্ত্রী, ‘

১২ বছর বয়সে ফুটবলার হওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছেন মার্তিনেজ। সেটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের ছিল। সেই সংগ্রামী জীবনের গল্প আমাদের শুনিয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনা এবং তাকে ভালোবাসে, তিনি তা জানেন। এবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এলেও সামনে আবার আসতে চান তিনি। সঙ্গে পুরো আর্জেন্টিনা দল নিয়েও তার আসার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্তিনেজ। আসলে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসাই তাকে এখানে টেনে এনেছে।’

মার্তিনেজকে বাজপাখি ও নৌকা উপহার : পরে মার্তিনেজকে ফান্ডেড নেক্সট কোম্পানির পক্ষ থেকে ‘বাজপাখি’ উপহার দেওয়া হয়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, মার্তিনেজকে বাজপাখি উপহার দিয়েছে ফান্ডেড নেক্সট। এতে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। মার্তিনেজের বাজপাখি নামটি খুব পছন্দ হয়েছে। এছাড়া বিশ্বকাপজয়ী এই গোলকিপারকে পাটের তৈরি নৌকা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বই উপহার দেওয়া হয়।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *