২০১১ সালে লিওনেল মেসি যখন সদলবলে ঢাকায় বিমানবন্দরে পা রাখলেন, তখন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে সামনের সাড়িতে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জাতীয় ফুটবল দলকে। সেই দলের অধিনায়ক হিসেবে বিপ্লব ভট্টাচার্য মেসির গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দেওয়ার বিরল সম্মানটা পেয়েছিলেন। সে সময় বর্তমানদের পাশাপাশি সাবেক ফুটবলারদেরও নানাভাবে সম্পৃক্ত করা হয়।
অথচ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ১১ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত সফরে এসে একজন ফুটবলারেরও দেখা পেলেন না। এমনকি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কোন কর্মকর্তাকেও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেয়নি যাদের আমন্ত্রণে মার্তিনেজ ঢাকায় এসেছেন, সেই নেক্সট ভেঞ্চার্স। সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারদের বঞ্চিত করা এই প্রতিষ্ঠান কিন্তু ঠিকই জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে স্বপরিবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মার্তিনেজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। তাদের অতিথি তালিকায় ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকও। অথচ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনকেও আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি নেক্সট ভেঞ্চার্স। এ নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
বিপ্লব নিজেই অবাক হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারদের মার্তিনেজকে নিয়ে এই আয়োজনে সম্পৃক্ত না করায়। সাবেক এই গোলকিপার একই সঙ্গে জাতীয় দলের গোলকিপিং কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিপ্লবের মতে মার্তিনেজের মতো বিশ্ব তারকার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়াটা হতে পারতো তরুণ ফুটবলারদের জন্য দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। যেটা পুঁজি করে তারাও বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারতেন। ‘২০১১ সালে মেসিরা যখন বাংলাদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলতে আসলেন, তখন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে মেসির গলায় মালা পড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে সময় দেখেছি, অনেক সাবেক ফুটবলারদের নানাভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। এবার কারা মার্তিনেজকে, এনেছে, কেনই বা এনেছে, বুঝতে পারছি না। তারা সাবেক ক্রিকেটারকে দাওয়াত করেছে অথচ দেশে অনেক লিজেন্ডারি ফুটবলার ছিলেন, যাদের সঙ্গে দেখা হলে মার্তিনেজ নিজেও এদেশের ফুটবলের সোনালী অতীত সম্পর্কে ধারণা পেতেন’, দেশ রূপান্তরকে বলছিলেন বিপ্লব আক্ষেপের কথা।
সাবেক তারকা শেখ মোহাম্মদ আসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, ‘মাশরাফীকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটা নিয়ে কোন আপত্তি নেই। তবে এ দেশে অনেক তারকা ফুটবলার আছেন, যারা সম্মানের জায়গায় মাশরাফীর চেয়ে কম নন। তাদেরকে সম্মান জানানো হয়নি। আমি মার্তিনেজকে যারা এনেছেন, তাদের ধিক্কার জানাই। আয়োজকরা এ দেশের কোটি কোটি আর্জেন্টাইন দর্শকের হৃদয় গুড়িয়ে দিয়ে কেবল নিজের স্বার্থ হাসিল করতেই মার্তিনেজকে এনেছে। মাশরাফী মার্তিনেজকে ক্রিকেট দলের জার্সি উপহার দিয়েছেন। সেখানে একজন সাবেক অথবা বর্তমান ফুটবলার থাকলে তিনি ফুটবল দলের জার্সিটাও উপহার দিতে পারতেন। এটা অনেক লজ্জার ব্যাপার হয়ে গেলো। বাংলাদেশ সম্পর্কে সে একটা ভুল ধারণা নিয়ে গেলো।’ আরেক সাবেক তারকা আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু প্রশ্ন তুলেছেন মার্তিনেজের এই সফর নিয়েই। কিসের স্বার্থে তারা আনা হয়েছে, সেটাই জানতে চাইছেন আশির দশকের মাঠ কাঁপানো এই ফুটবলার বলেন, ‘মার্তিনেজ এসেছে আমরা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কেন এসেছে সেটাই তো বুঝলাম না। খেলা দেখাতে এসেছে, ফুটবলের উন্নয়নের জন্য এসেছে নাকী অন্য কোন স্বার্থে জানা নেই। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, একজন বিশ্বতারকা ফুটবলার এসেছেন, তার পাশে তো একজন ফুটবলারের থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। এটাই মানাতো। সেই ফুটবলারদেরই ডাকা হলো না। মাশরাফীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, এটাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তবে মাশরাফীর পাশাপাশি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারকেও আয়োজকরা বলতে পারতো। এই সম্মানটুকু দেওয়া উচিত ছিল।’
এমনিতে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের ফুটবল নিয়ে কার্যকলাপে ভীষণ বিরক্ত চুন্নু। তবে এক্ষেত্রে তিনি পাশে থাকলেন সালাউদ্দিনেরও, ‘ব্যক্তি সালাউদ্দিন যেমনই হোক, আয়োজকদের উচিৎ ছিল অন্তত বাফুফের সভাপতির চেয়ারটাকে সম্মান জানানো, তাকে আমন্ত্রণ জানানো। সেটাও তারা করেনি। এটাই নিয়ম। এভাবে তারা মার্তিনেজের মতো তারকাকে ঢাকায় এনে বঞ্চিত করেছে বিগত দিনের ফুটবলারদের। একই সঙ্গে দেশের কোটি কোটি সমর্থকদেরাও বঞ্চিত করা হয়েছে। বিস্মিত হয়েছি, যখন দেখলাম মিডিয়াকর্মীদেরও তার সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। এ দেশে কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে আয়োজকরা। তারা কেন তাদের ব্যপকভাবে উপস্থাপন করলো না? কেন তাকে চুপিসারে এনে চুপিসারে বিদায় করে দিলো? কী উদ্দেশ্যে তাকে আনা হয়েছে, সেটা আমি জানতে চাই। ও কিন্তু এসেছিল বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের উন্মাদনার কথা জেনে। অথচ এখানে এসে সেই উত্তাপটাই দেখতে পেলেন না মার্তিনেজ।’
বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনও এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন বাফুফেকে সঙ্গে নিয়ে মার্তিনেজের সফরসূচীটা সাজালে সাধারণ ভক্ত-সমর্থকরা তাদের প্রিয় তারকাকে কোন না কোনভাবে কাছ থেকে দেখতে পারতেন। মিডিয়ার মাধ্যমেও সারা দেশের মানুষ জানতে পারতেন মার্তিনেজ সম্পর্কে। সারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে নেক্সট ভেঞ্চার্স কোন স্বার্থ হাশিল করতে চাইলেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।
Source link