রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বা প্রধান হাঁসদা কোনও অপরাধ করেননি। তবু তাঁদের প্রাণ গিয়েছে বেঘোরে! হাতির হানায়। কেউ হয়তো জঙ্গলপথে বাড়ি ফিরছিলেন। কেউ রাতে নিজের বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ করে উর্পাজনশীল ব্যক্তির মৃত্যুতে পথে বসেছিল পরিবারগুলি। এ বার সেই সমস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হাতির হানায় মৃতদের পরিজনকে বনদপ্তরে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ‘এই সময়’কে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সুদিন ফেরার আশায় বুক বাঁধছেন মৃতদের পরিবার।
মোরগ লড়াইয়ে জিতে মনের আনন্দে বিকেল চারটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের গোলবান্দি গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ মাহাতো। গোবিন্দপুর জঙ্গল রাস্তায় আচমকা হাতির হানার মৃত্যু হয় তাঁর। ২০২০ সালে ২৭ ডিসেম্বরের ঘটনার পরে কার্যত নিঃস্ব হয়ে যায় গোটা পরিবার। মৃত রবীন্দ্রনাথের ছেলে চিন্ময় মাহাতো বলেন,’বাবা রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর রোজগারেই পরিবার চলত। বাবা মারা যাওয়ার পরে অন্ধকার নেমে আসে পরিবারে। এখনও সেই কষ্ট চলছে।’ তিনি বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই ঝাড়গ্রাম রেঞ্জ অফিস থেকে ফোন করে আমাকে চাকরির আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকের অফিসে জমাও দিয়েছি।’
মানিকপাড়া রেঞ্জের অন্তর্গত নুনিয়াকুন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা গোলক মাহাতো। ২০১১ সালে তিনি যখন হাতির হানায় মারা যান তখন তাঁর ছেলের বয়স ছিল এগারো বছর। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও এক অবিবাহিত কন্যা। মাথায় বাজ পড়ে পরিবারের। তা সত্ত্বেও ছেলে মনোরঞ্জন মাহাতোকে কলেজে সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়িয়েছেন। এখন ছেলে মনোরঞ্জনের বয়স তেইশ বছর। মনোরঞ্জন বলেন, ‘বাবা চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। মা পরে সংসরের হাল ধরেন। ঘরে টাকা-পয়সা নেই। তাই মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দিই। চাকরিটা পেলে অনেক উপকার হবে।’
লোধাশুলি রেঞ্জের সিমলি গ্রামের বাসিন্দা দীপক মাহাতো হুলা পার্টির সদস্য ছিলেন। গোপীবল্লভপুরে হাতি তাড়াতে গিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল মারা যান। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং দুই শিশু পুত্র-কন্যাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন উচ্চ মাধ্যমিক মাধুরী মাহাতো। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই খুবই কষ্টে রয়েছি। লোকের জমিতে চাষের কাজ ও জঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ করে কোনও রকমে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারছি।’
হাতির আক্রমণে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকার (বিজ্ঞপ্তি নম্বর-এলএবিআর-৭১/ইসি/১এম-০২/২০২২ তারিখ ২৫/০৫/ ২০২৩) চাকরির ব্যবস্থা করেছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘হাতির হানায় মৃতদের পরিজনকে ফরেস্ট গার্ড পদে নিয়োগ করা হবে। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে তাঁদের নিয়োগও হয়ে যাবে।’ জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চার কেন্দ্রীয় সভাপতি অশোক মাহাতো বলেন, ‘রাজ্য সরকারের ফরেস্ট গার্ড পদে নিয়োগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে জঙ্গলমহলে হাতি ও মানুষের সুরক্ষা নিয়ে স্থায়ী সমাধান করুক সরকার।’
Source link