রশ্মির সব কাণ্ডকারখানা এখনো বাসার ভেতরেই, সামনে ক্যামেরা নিলেই হাত গুটিয়ে বসে পড়ে। মানুষের সামনে, বাড়ির বাইরে সে একেবারে শান্ত শিশু, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে! কিন্তু বাসার ভেতর থাকলেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বা তার ছোট্ট গিটারটা নিয়ে হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে যাচ্ছে, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে…’ কি ‘বাগিচায় বুলবুলি…’। চোখে–মুখে দুষ্টুমি! অন্য সব শিশুর মতোই তার আচার–আচরণ। দেয়ালে আঁকিবুঁকি করছে; আর খাবারের বেলায় তার সরাসরি জবাব, ‘খাব না’!
গত আড়াই বছর সব কাজকর্ম বন্ধ করে মেয়েকে পুরো সময় দিয়েছি আমি। আর আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, যতখানি সম্ভব মুঠোফোন থেকে দূরে রাখতে পারি ওকে। মেয়ের বাবা মেয়েকে তাই স্কেটিংয়ে নিয়ে যান, সাঁতারে নিয়ে যান। আর ওর নানি বাংলায় ছড়া শোনান, দোয়া–দরুদ শোনান!
নাহ, আমি বা আমরা মেয়েকে কিছু শেখাই না। ও নিজ থেকে যতটুকু আনন্দ নিয়ে করে, ততটাই। তারপরও সবার মধ্যে কৌতূহল, কখনো কখনো চলে তুলনা, ‘রশ্মি কার মতো হচ্ছে? আপনার মতো নাচ শিখবে? নাকি গান? নাকি বাবার মতো হবে? স্থপতি হবে? অভিনেতা নাকি নির্মাতা?’
আমি জানি না। আমার এখন শুধু একটাই প্রার্থনা, রশ্মি যেন ভালো মানুষ হয়, মানবিক হয়; আর যা–ই করুক, কাউকে যেন সে কষ্ট না দেয়। আর যা–ই করিস মা, নিজেকে ভালোবাসিস!
সেদিন এক দাওয়াতে আমার প্রিয় মানুষ শ্রদ্ধেয় আফজাল হোসেন আমার মেয়েকে নানা কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কার মতো?’
একবাক্যে মেয়ে বলল, ‘আম্মুর মতো!’
কাজল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে চোখের পানিকে প্রশ্রয় দিলাম না! তুই তোর মতো হোস, মা।
Source link