বাংলা মাধ্যম নাকি ইংরেজি, কোথায় পড়বে সন্তান
গলাচিপা প্রতিদিন প্রকাশের সময় : জুলাই ৫, ২০২৩, ৪:২৫ পূর্বাহ্ন / ০ Views
ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে দেশের মূলধারার উচ্চশিক্ষার কোর্সগুলোতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। মূলত এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। সিলেবাস ও প্রশ্নপত্রের ধরনের কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞান, স্থাপত্য, প্রকৌশলবিদ্যা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা উত্তীর্ণ হতে পারেন না, এমনটাই সবার ধারণা। ‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে বিদেশে যাওয়া ছাড়া দেশে কোনো গতি নেই’—কথাটা তাই খুবই প্রচলিত। কথাটা একাংশে সত্য, কিন্তু পুরোটা নয়। আসলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই অনেক কম। তারপরও বিভিন্ন সেরা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়া বা ভর্তি হওয়ার খবর একেবারে বিরল নয়। তবে তার জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা প্রস্তুতি লাগে। কেউ চাইলে সেই প্রচেষ্টা তো নিতেই পারেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকে। দেশের ভেতর উচ্চশিক্ষার দ্বার ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েদের জন্য একেবারে বন্ধ নয়।
কোনো কোনো অভিভাবকের আশঙ্কা থাকে, ইংরেজি মাধ্যমে পড়লে সন্তান বাংলা ভুলে যাবে, দেশীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাবে। বিষয়টি কিন্তু শিক্ষার্থীর নিজের ও পরিবারের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। সন্তান স্কুলের বাইরে একটা বড় সময় অভিভাবকদের সঙ্গে বা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকে। বাড়িতে যদি শুদ্ধ বাংলা বলার, বাংলা বই পড়ার, বাংলা গান শোনার চল থাকে, তবে এই শঙ্কা অমূলক।
সমস্যা হলো আমাদের দেশে সন্তানের ঝরঝর করে নির্ভুল ইংরেজি বলাটাকে অভিভাবকেরা যতটা উৎসাহ দেন, গর্ববোধ করেন, শুদ্ধ বাংলা বলার ক্ষেত্রে তেমনটা করেন না। ফলে বাংলাকে অবহেলা বা উপেক্ষা করার প্রবণতা পেয়ে বসে শিশুটিকে। নির্ভুল ইংরেজি বলার মতো নির্ভুল ও শুদ্ধ বাংলা বলার প্রয়োজনীয়তাটুকুও সন্তানকে বোঝাতে হবে। এ ছাড়া কিছু ইংরেজি স্কুলে বাংলায় কথা বলাটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটাও ঠিক নয়। ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলাটা দোষের কিছু নয়। আজকাল ইংরেজি স্কুলগুলোতেও নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি পালন করা হচ্ছে। এই দিনগুলো কেন পালন করা হয়, এর তাৎপর্য কী—এসবও বুঝিয়ে বলতে হবে সন্তানকে। এগুলো যেন কেবল উৎসব পালনের উপলক্ষ না হয়।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার আরেক নেতিবাচক দিক হিসেবে ধরা হয় খরচাপাতিকে। বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে আকাশ-পাতাল পার্থক্য এই খরচের। অনেক মধ্যবিত্ত অভিভাবক তাই সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান। আবার স্কুলে স্কুলে ব্যয়ের পার্থক্যও মাঝেমধ্যে অযৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে আসলে অভিভাবকদের কিছু করার নেই, তবে সরকার ও কর্তৃপক্ষের আছে। সরকার চাইলে এতে লাগাম টানতে পারে এবং বিষয়টিকে একটা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারে। আর যদি কোনো অভিভাবক মনে করেন এই ব্যয় সংকুলান করা তার পক্ষে অসম্ভব, তবে আমি বলব, ও পথে না হাঁটাই ভালো। মেধা, পরিশ্রম আর চেষ্টা আপনার সন্তানকে ঠিকই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে, তা সে যে মাধ্যমেই পড়ুক না কেন। বাংলাদেশের অনেক গ্রামের সাধারণ স্কুল, মাদ্রাসায় পড়া ছেলেমেয়েরা আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। এমন বহু উদাহরণ আছে।
Source link