মানুষ, তোমার লীলা বড় অপার্থিবময়!
আহসান হাবিব
আহসান হাবিব: মিথ তৈরি করুন, নদী, আকাশ, মাটি এই নিয়ে আর কতো। এসব তো দেখা যায়। ছোঁয়া যায়। গন্ধ নেয়া যায়। একবার ভাবুন তো আপনি দেবতা জিউসকে কখনো ছুঁতে পারবেন? তিনি যে মহাপরাক্রমশালী, যখন যা চাই বানিয়ে ফেলতে পারবেন, হয়ে উঠতে পারবেন, যাকে তাকে ‘বর’ দিতে পারবেন, কিন্তু একবারও কি আপনার মনে হয় এটা গাঁজাখুরি, সত্য নয়? মনে হয় না, বরং সত্য বস্তুর চেয়ে এগুলো সত্য মনে হয়। এরকম মিথ সমাজে যুগ যুগ ধরে টিকে আছে এমনকি বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের কালেও মিথ নিয়ে সংশয় দেখা দেয় না। শুধু যে অদৃশ্য বস্তু নিয়ে মিথ তৈরি হয়, তা নয়, প্রতিদিন তৈরি হয়। ওই যে চাঁদে মানুষের মুখ দেখতে পাওয়া, একটি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পুকুরের জল খেয়ে শত শত রুগী ভালো হয়ে পড়া। এর সত্যাসত্য যাচাই না করেই মিথ বিশ্বাসী মানুষ ছুটতে থাকে সেই দিকে এবং তারা সত্যি সত্যি চাঁদে মানুষের মুখ দেখে।
কেন মানুষ এই সব মিথ তৈরি করে এবং বিশ্বাস করে? কারণ আর কিছুই নয়, মানুষ নামক প্রজাতিটির যা কিছু শ্রেষ্ঠ, এই মিথ তৈরি তার প্রধান কীর্তি। যা নেই, তা নিয়ে কল্পনায় মেতে ওঠা, এবং কল্পনার সৌন্দর্যে বাস করতে থাকা। এইসব কল্পনা একদিন সত্য বাস্তবেও রূপায়িত হয়ে পড়ে, তখন সেসব আর তেমন আনন্দিত করে না তাকে। নতুন নতুন কল্পরাজ্যে নিজেকে সে ব্যাপৃত করে ফেলে। বাস্তবের রুঢ় কাঠিন্য থেকে নিজেকে একটু আড়াল করতে মানুষ যা সৃষ্টি করে, শিল্প হিসেবে তুলনা তার নেই। মানুষ যখন কথা বলে, সে চেষ্টা করতে থাকে তার ভাষার ভেতর দিয়ে এমন কিছু বেরিয়ে আসুক যা বিপরীত প্রান্তে থাকা মানুষটিকে সামান্য হলেও আনমনা করে দিক। এমনকি একটি সত্য ঘটনার বর্ণনাকেও মনে হতে থাকবে যেন ঘটনাটি পৃথিবীতে নয়, অন্য কোথাও ঘটছে।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন, আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোন সূচনাবিন্দু কিংবা শেষ কিছুই মেলাতে পারছেন না। আকাশে ঝুলে থাকা মেঘের মত তারা এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আহা! মানুষ, তোমার লীলা বড় অপার্থিবময়। লেখক: ঔপন্যাসিক
Source link