শুভ জন্মদিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় – GalachipaProtidin.Com
শুভ জন্মদিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় – GalachipaProtidin.Com

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১তম জন্মদিন ৬ জুলাই। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের এ শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশের উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সামনে নেওয়ার প্রত্যয়ে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি হয়। ১৯৫২ সালে শহরের ভুবনমোহন পার্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে জনসভা হয়। অনেক আন্দোলনের পর তৎকালীন আইনসভার সদস্য মাদার বখশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে এর ক্লাস শুরু হয়। সাতটি বিভাগ আর ১৬৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৬১ সালে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের পরিকল্পনায় মতিহারের সবুজ চত্বরের নিজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হানাদার বাহিনীর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার শহিদ হওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বার যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হবিবুর রহমান, মীর আবদুল কাইয়ুম, সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাড়াও ৩০ জন ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহিদ হন। এখানে শিক্ষক কর্মরত আছেন প্রায় ১ হাজার ২৫০ আর কর্মকর্তা- কর্মচারী আছেন ২ হাজার ৬০০-এর কাছাকাছি। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করছেন। ৭৫৩ একর জায়গায় একাডেমিক ও আবাসিকের বাইরে এর সুবৃহৎ লাইব্রেরি, শহিদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর একেকটা অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। এর ছয়টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট আর ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। 

দীর্ঘ ৭০ বছরের পথচলায় এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন দেশবরেণ্য জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, বিজ্ঞানী পিটার বার্টচি, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, প্রফেসর হাসান আজিজুল হক, প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক, প্রফেসর বদরুদ্দীন উমরের মতো শিক্ষকরা। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষকরা গুণমানের গবেষণাকর্ম করছেন। ২০১৯ সালে স্কোপাসের বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এখানকার ছাত্ররাজনীতির দিকপালরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যালামনাইরাও তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে জ্যোতি ছড়াচ্ছেন।

তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণাকে বিশ্বমানের করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সিনেট ও রাকসু অকার্যকর রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সুশাসনের সংকট দেখা দিচ্ছে ও ছাত্ররাজনীতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাবেক কয়েক জন উপাচার্যের প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা বিতর্ক এবং বিতর্কিত নিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে ব্যাহত করেছে। সংকট নিরসনের প্রচেষ্টার পরও শিক্ষার্থীদের আবাসন, বিভাগের শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষকদের চেম্বার-সংকট আছেই। আশার কথা হচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন পর একজন শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য তার প্রশাসনিক টিম নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি, অনিয়ম আর অবৈধ নিয়োগের জেরে অচলাবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান প্রশাসন অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা এনেছে। বর্তমান প্রশাসন দুটি আবাসিক হল নির্মাণকাজ, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির মেধাবীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কিন্তু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমা চালু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের এক প্ল্যাটফরমে আনার মতো শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ১০০ জন গবেষক নির্বাচন ও সম্মাননা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময়ের বিষয়টিও প্রশংসার দাবি রাখে। সেই সঙ্গে বর্তমান প্রশাসন আরো মানসম্মত গবেষণা, বহির্বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিংক প্রোগ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং পুনরুদ্ধার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্টে আরো উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার পথচলায় মাঝে মাঝেই হোঁচট খেয়েছে, আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের কর্মের মাধ্যমে স্বমহিমায় যুগ যুগ টিকে থাকবে। সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে। শুভ হোক, প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। 

লেখক :সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *