রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কমিটির কয়েক নেতার বিরুদ্ধে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মহানগর কমিটির সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি ছাত্রলীগ নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার। ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মকসুদুর রহমান সৌরভ মাদকাসক্ত ও জাতীয় পার্টির পরিবারের সদস্য। তারা অবিলম্বে কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, ৮ জুন আকবর আলী জ্যাকিকে সভাপতি, খন্দকার মকসুদুর রহমান সৌরভকে সাধারণ সম্পাদক, তরিকুল ইসলাম কনককে সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাদিউল আলম সজীবকে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং রাকিব রায়হান রনিকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পরই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা নতুন কমিটি বাতিল চেয়ে মহানগর ছাত্রদলের ৫১ জন নেতাকর্মী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগনামা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন। ১৫ জুন পাঠানো অভিযোগের একটি কপি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়, নতুন আংশিক কমিটির সভাপতি জ্যাকি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পার্টনারে ব্যবসা করেন। তারা একসঙ্গে ঘুরে বেড়ান। ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করেন। এমন একজন ব্যক্তি দিয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি চলতে পারে না।
অন্যদিকে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মকসুদুর রহমান সৌরভ সম্পর্কে অভিযোগ হলো, সৌরভ চিহ্নিত মাদকসেবী। মাদক সেবনের সময় তিনি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। তার বাবা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মোস্তফিজুর রহমান ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া সৌরভ ইতোপূর্বে একটি বিয়ে করেন। নির্যাতনের পর সেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। এ কারণে সৌরভের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছিলেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সৌরভ কয়েক বছর আগে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় সার্টিফিকেট আটকে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। তার দুই হাতে অশ্লীল উল্কি, ট্যাটুতে ভরা। মাদকাসক্ত হওয়ায় দুই হাতের বিভিন্ন জায়গা নিজেই কেটে ক্ষত করে রেখেছেন। এমন একজন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে কোনোভাবেই মানায় না।
অন্যদিকে কমিটি সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম কনক সম্পর্কে অভিযোগ হলো, কনক ২০১৭ সালে ভোকেশনালে মাধ্যমিক পাশ করেন। এটাই তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা। আর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক সাদিউল ইসলাম সজীব মাধ্যমিক পাশের পর আর পড়াশোনা করেননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাজশাহী মহানগরীর ৮ থানা ও ৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি থাকার পরও নতুন কমিটিতে শুধুমাত্র বোয়ালিয়া থানা এলাকার নেতারাই সুযোগ পেয়েছেন। অভিযোগকারীদের অন্যতম সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ছাত্রদল করি। আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যাদের দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়েছে তারা ২০১৬ সালের কমিটিতেও ছিলেন এবং বর্তমানে নেতাকর্মীদের কাছে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রাজিব আর আমরা একই এলাকার বাসিন্দা। পরিচয় থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা সম্পর্ক নেই। আর কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, ১৩ বছর ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। এর আগে আমি ৬ বছর রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আরও ৬ বছর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। যারা কমিটিতে পদ পায়নি তারা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে আমার ও আমার পরিবার সম্পর্কে কুৎসা রটাচ্ছেন। তারা যেসব অভিযোগ করেছেন তার সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
Source link