ইংরেজদের চোখে কেমন ছিল বাংলার বর্ষা
ইংরেজদের চোখে কেমন ছিল বাংলার বর্ষা

৮০০ সালের নভেম্বর মাসের কথা। টানা কয়েক মাস বৃষ্টিবাদলের শেষে কলকাতাজুড়ে হালকা শীত পড়েছে। আবহাওয়াটা বেশ আরামদায়ক। এ রকম এক সন্ধ্যায় শহরের সব ইউরোপীয় অধিবাসী সমবেত হয়েছেন জমকালো এক ভোজসভায়। থ্যাংকসগিভিংয়ের সেই ভোজসভায় কী নেই! টেবিলজুড়ে বাহারি খাবার আর পানীয়র ছড়াছড়ি। নারীদের পরনে ঝলমলে ঝালর ঝোলানো মসলিনের পোশাক, পুরুষদের পরনে সারা বছর জমিয়ে রাখা কোট, সবার চোখেমুখে আনন্দ। বিলাসী এ আয়োজনের মূল কারণ একটাই—দীর্ঘ বর্ষার দুর্যোগঘন সময় পেরিয়ে এখনো যে তাঁরা এই ধরাধামে টিকে আছেন, সে জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দেওয়া।

ইংরেজশাসিত ভারতে ভাগ্য ফেরানোর জন্য আসা ইউরোপীয়দের ভেতর তখন এক আতঙ্কের নাম বর্ষা। ‘টু মনসুনস’ বা ‘দুই বর্ষা’ বলে একটা শব্দ চালু হয়ে গিয়েছিল বিলেতিদের মধ্যে। ভারতবর্ষে একজন বিলেতির আয়ু বড়জোর ‘দুই বর্ষা’—এমনই এক ধারণা গড়ে উঠেছিল ইংরেজদের ভেতরে। অবশ্য এর পেছনে কিছু কারণ ছিল। ১৬৯০ সালে বিলেত থেকে ছয় মাসের জাহাজযাত্রা শেষে ইংরেজ ধর্মযাজক অভিংটন যখন বোম্বে (এখন মুম্বাই) পৌঁছান, তখন বর্ষাকাল সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই নানা অসুখে ২৪ জন সফরসঙ্গীর ২০ জনই প্রাণ হারান। এর দুই বছর পরের হিসাব ছিল আরও ভয়াবহ। বছরের শুরুতে বোম্বে শহরে ইউরোপীয়র সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০০, কিন্তু বছর শেষে টিকে ছিলেন মাত্র ১০০ জন।

কলকাতার চিত্র এর ব্যতিক্রম ছিল না। ১৭০৭ সালের এক হিসাবমতে, কলকাতা শহরের ১ হাজার ২০০ ইউরোপীয়র ভেতরে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাধিস্থ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪৬০। উনিশ শতকেও এ অবস্থার তেমন হেরফের হয়নি। মহামারি বা অজানা রোগে ভুগে, পানিতে ডুবে, বজ্রাঘাতে, হিংস্র কিংবা বিষধর প্রাণীর আক্রমণে মৃত্যু ছিল এক নিয়মিত ঘটনা। তবে এত সবের পরও ইংরেজদের জন্য তো বটেই, অন্যান্য পশ্চিমা জাতির ভাগ্যান্বেষীদের জন্যও তখন স্বপ্নপূরণের গন্তব্য ভারতবর্ষ।

ঔপনিবেশিক রাজত্ব কায়েম এবং ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার লোভ সংবরণ করা ছিল মুশকিল। আয়ু হারানোর আতঙ্কের মধ্যেও নিজ নিজ ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টায় তাঁরা সদলবল জড়ো হয়েছেন এই ভারতবর্ষে। অপরিচিত এই ভূখণ্ডের বর্ষা, বিশেষত বাংলার বর্ষাকে তাঁরা কেমন দেখেছিলেন?


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *