মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে দু-চার ঘণ্টায়ও আসে না। তখন গরমে চিকিৎসক, নার্সসহ রোগীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। হাসপাতালে ভর্তি এরাদউল্লাহ নামে এক ডায়রিয়া রোগী বলেন, ‘আমাদের এ উপজেলা হাসপাতালে আগেও ভর্তি হয়েছি, এখন ডাক্তার-নার্স সবাই বেশ খোঁজখবর রাখছেন, ওষুধপত্রও দিচ্ছেন; কিন্তু বিদ্যুৎ একবার গেলে দু-চার ঘণ্টায় আসে না। তখন গরমে যেন আরও দুর্বল হয়ে যাই।’ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন হাসপাতালের গাইনি বিভাগে দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমে অন্ধকারে ঘামে ভিজে লাইন ধরে আছেন শতাধিক প্রসূতি ও গাইনি রোগী। ভেতরে চিকিৎসক ঘামে অর্ধভেজা শরীর নিয়ে জানালা দিয়ে আসা ক্ষীণ আলোয় রোগীদের দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। এমন অবস্থা কতক্ষণ জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই। আবার কখন আসবে তা-ও বলতে পারছেন না। এমনটা নাকি প্রায় সব সময়কার চিত্র। এমন দুর্ভোগের কি কোনো সমাধান নেই জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একটি পর্যাপ্ত ক্ষমতার জেনারেটর নয়তো হাসপাতালের বিদ্যুৎ লাইনটি আলাদা করার ব্যবস্থা ছাড়া উপায় নেই। একই দুর্ভোগ দেখা গেল ইমার্জেন্সি বিভাগ, অপারেশান থিয়েটারসহ সর্বত্র। অপারেশন থিয়েটারে কোনো রোগীর অপারেশনের ব্যবস্থা করা হলে এ সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীকে অ্যানেশথেসিয়া দিয়েও বসে থাকতে হবে বিদ্যুৎ আসার জন্য। এমনই দশা মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। হাসপাতালের ভ্যাকসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কবির উদ্দিন ও নার্সিং বিভাগের ইনচার্জ সীমা রানী বলেন, খুবই ছোট সাইজের একটি জেনারেটর থাকলেও সেটির জন্য নেই কোনো ফুয়েল বরাদ্দ। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কয়েকটি ভবনের কয়েকটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম তিন-চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন। একসময়কার জরাজীর্ণ মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের ছোঁয়া নিয়ে বদলে গেলেও বদলায়নি সময়ের প্রয়োজনের অনেক চাহিদা। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগে আলাদা জেনারেটর নয়তো একটি বড় জেনারেটরের ব্যবস্থা অথবা বিদ্যুতের লাইনটি ভিআইপি লাইনে স্থানান্তর করা যায় কিনা তা নিয়ে সংসদ-সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করব। আর পরিচ্ছন্নতা কর্মীও বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমন ঘোষ পল্লব জানান, প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা শিশু ও নারী রোগীকে আমরা যত্নসহকারে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিভিন্ন উন্নতমানের রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও শুধু অপপ্রচারের কারণে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ছোটেন রোগীরা। এতে গরিব রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, লাভবান হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। রোগীদের উন্নত সেবা দানের জন্য চিকিৎসক-নার্স সবাই নিরলস কাজ করছি।
Source link