বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিন
বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিন

আষাঢ় মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও না কোথাও মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত হচ্ছে।  সেই সঙ্গে প্রায় সবগুলো প্রধান নদনদীর পানি হু হু করে বেড়ে চলেছে। বিপৎসীমা পেরিয়ে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরাঞ্চলে এরই মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের হাওরাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তড়িঘড়ি ধান কাটতে হচ্ছে।  খেতের ফসল, গোলার ধান-চাল এবং গবাদিপশু নিয়ে বড় ধরনের সংকটের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় এসব এলাকার কৃষক ও অধিবাসীরা।

ইতোমধ্যে রংপুর, লালমনিরহাট, নিলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারতের সিকিম, আসাম, মেঘালয়ের ক্রমাবনতিশীল বন্যা পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সহজেই অনুমেয়। উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি শনিবার (৮ জুলাই) বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি প্রবেশ করায় গবাদিপশু নিয়ে বিপদে আছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। ৮ জুলাই সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারও লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। 

বন্যা এ দেশের মানুষের জন্য অতীতে অসংখ্য দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওরগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা এবং উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনার নদীর পানি। সিরাজগঞ্জ ও এর উত্তরে অর্থাৎ গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ- এ এলাকায় তখন বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তবে এবার দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোনো আশঙ্কা এখনো করছে না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজবাড়ী জেলার পদ্মাপাড়।

মৌসুমি বৃষ্টির কারণে উজানের ঢলে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরাঞ্চলের সব নদনদীর পানি বাড়ার ধারাবাহিকতায় দ্রুত বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। নদীতে পানি বাড়ায় নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালি, শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।

নদীর নাব্য দিন দিন কমে যাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলসহ নদী-তীরবর্তী এলাকা। গ্রামীণ সড়ক যাচ্ছে ডুবে। চলতি বছর নজিরবিহীন খরা কৃষির জন্য বিসংবাদ ডেকে এনেছে। কাঁচা মরিচের দাম ১ হাজার টাকায় পৌঁছানোর কারণ খরার কশাঘাত। ধান উৎপাদন সেচ ব্যবস্থার ফলে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও সবজি ও রবিশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। খরার পর বন্যা দেখা দিলে কৃষকের মেরুদন্ডে তা বড় ধরনের আঘাত হানবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে প্রতিটি মানুষকে। প্রশাসনকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কীভাবে বন্যার ধকল কাটানো যাবে সে বিষয়ে প্রস্তুতি থাকতে হবে। বন্যার ছোবল থেকে রক্ষা পেতে নদনদী খনন করে পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এদিকে, ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে কাদা পানি একাকার হয়ে নাগরিকদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে এখনো নগরবাসীকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেনি। সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির রাস্তা।

রাজধানীতে ভারী বৃষ্টি হলে মোহাম্মদপুর, আসাদ গেট, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে, কলাবাগন রোড, পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, আগারগাঁও, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকা, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও গুলশান লেকপাড় এলাকায় পানি জমে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিবদ্ধতা দেখা দেয় ধানমন্ডি, মিরপুর ও হাতিরঝিল এলাকায়। পানিবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলো মনিটরিং করা জরুরি।  খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ করার পর তা মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন কাজ শেষ হওয়ার পর তা আর রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে খাল ও ড্রেনের মুখ আবার ভরাট হয়ে যায়।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *