সমন্বয়হীনতায় জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
সমন্বয়হীনতায় জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়ন ঘাটতির কারণে এমনটা হচ্ছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার এক বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি মনে করে, মশকনিধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বড় সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা করে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে-এমন সতর্কবার্তা থাকার পরও রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক। উল্লিখিত গবেষণাপ্রসূত পলিসি ব্রিফকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা কর্তৃপক্ষের ছিল না। যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অপ্রতুল ও লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি রোধের যে সম্ভাবনা ছিল, সেদিকে কর্তৃপক্ষের বাস্তব দৃষ্টি প্রশ্নবিদ্ধ।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সব অংশীজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করা হবে।

জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে মশকনিধনে নিজস্ব পরিকল্পনায় ওষুধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে দুই সিটি করপোরেশনকে একই সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

মশকনিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন: মশার উৎস নির্মূল দুটি ভবনের মধ্যবর্তী জন-চলাচলহীন অংশে জমে থাকা পরিত্যক্ত বর্জ্য, ঝোপঝাড়, ড্রেন, ডোবা, নালা এবং খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা, পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ব্যবহার। বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) দপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই (মে-আগস্ট) সব হটস্পট চিহ্নিত করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসাবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে। তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *