Loksabha Election | El Nino | লোকসভা ভোটে এল নিনো কতটা প্রভাব ফেলবে?
কলকাতা: এল নিনো (El Nino) বদলে দিতে পারে রাজনীতির (Politics) গতি প্রকৃতি। অতীতে বহু এল নিনো বিভিন্ন ধরনের পালা বদলের সাক্ষী। নাসা এবং ওয়ার্লড মেটিরিয়লজিকাল অর্গানাইজেশন ঘোষণা করেছে, আবার ফিরে আসছে ‘এল নিনো’। যার ফল অস্বাভাবিক উষ্ণতা, উষ্ণতা-বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের (Rain) বড় রকমের হেরফের। অতীতের এল নিনো বছরগুলোর তথ্য বলছে, এল-নিনোর ফলে অবধারিত ভাবে বাতাসে জলকণার পরিমাণ কমে যাওয়া এবং হিট ওয়েভ এবং খরা। ভারতের ক্ষেত্রে যার প্রাথমিক এবং প্রতক্ষ প্রতিক্রিয়া হল ফসল উৎপাদনে ঘাটতি। ‘ইন্টার ন্যাশনাল ফোরাম ফর এনভায়র্নমেন্ট, সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড টেকনলজি’র সি ই ও, চন্দ্র ভূষণ সম্প্রতি ভারতের ক্ষেত্রে এই এল নিনোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, এল নিনো শুধু খরা, অনাবৃষ্টি, ফসল উৎপাদনের ঘাটতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, যেহেতু এর ফলে অবধারিত ভাবে উৎপাদন কমে এবং খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়, কখনও কখনও দুর্ভিক্ষও দেখা দেয়, তাই এর প্রভাব রাজনীতিতেও পড়ে। উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে সরকারের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের উপরেও। যার সাক্ষী ভারতের বড় বড় পরিবর্তন।
চন্দ্র ভূষণ তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে ১৮৭৬ সাল থেকে ভারতে ঘটে যাওয়া অসংখ্য তথ্য হাজির করেছেন। আমরা এখানে শুধু স্বাধীনতা পরবর্তী তথ্যগুলোই তুলে ধরছি। তাঁর মতে ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৫-৬৬, এই দুই বছর পর পর এল নিনোর কারণে খরা এবং তা সামাল দিতেই ভারতে পরিকল্পনা হয়েছিল সবুজ বিপ্লবের এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া গঠনের।
চন্দ্র ভূষণের মতে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০, ভারতীয় রাজনীতির টান টান উত্তেজনার এই পাঁচ বছর জরুরি অবস্থা পরবর্তী ইন্দিরার পরাজয়, মোরারজি সরকারের গঠন এবং পর পর মোরারজি সরকারের এবং চরণ সিং সরকারের বিদায়, এই সবই ঘটেছিল একের পর এক এল নিনো বছরে।
১৯৭৯ সালের এল নিনো ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ধরনের। প্রবল খরায় বিধ্বস্ত হয়েছিল ভারত। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল ১৯৭৯-র এল নিনোর ধাক্কায়। চন্দ্র ভূষণ বলছেন, অর্থনীতির এই সংকটময় সময়ই ১৯৮০ সালে জনসঙ্ঘ থেকে জন্ম নিয়েছিল বিজেপি। যা পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনিতিকে অনেকটাই বদলে দেয়।
এই সব তথ্য হাজির করে চন্দ্র ভূষণ প্রশ্ন তুলেছেন, চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩-এর এল নিনো ভারতীয় রাজনীতিকে কী ভাবে প্রভাবিত করবে? তাঁর মতে, প্রথমত বর্ষা এসেছে দেরিতে। যা এখনও পর্যন্ত স্বাভিক বছরের তুলনায় যা ৪৯ শতাংশ কম। এবারের এল নিনো তার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে মে-জুন থেকে। ফলে বর্ষার বাকিটাও স্বাভাবিক না হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অর্থাৎ, ইন্ডিয়ান মেটিরিয়লজিকাল ডিপার্টমেন্টের আগাম স্বাভাবিক বর্ষার ঘোষণা থাকলেও সেই পূর্বাভাস মিলল না। এখন এটা বাস্তব যে এই এল নিনো ভারতের ফসল উৎপাদনে বড় রকমের প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ‘দ্য ল্যাবরেটরি ফর এক্সপেরিমেন্টাল হাইড্রোক্লাইমেট প্রেডিকশন’ ভারত সম্পর্কে একটি আগাম ঘোষণায় বলেছে, উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং দক্ষিণ ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাসে উল্লেখযোগ্য রকমের কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে চন্দ্র ভূষণ বলেছেন, বিশ্ব-উষ্ণায়ণ এবং এল নিনো এই দুইয়ের প্রভাবে আস্বাভাবিক রকমের তাপমাত্রা বৃদ্ধির আগাম ঘোষণা তো রয়েইছে। এর ফলে ভারতে ২০২৩-এর শীতকালে কম ঠান্ডা পড়বে, যা গমের উৎপাদন বড় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। হিট ওয়েভের জন্য গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতের গম উৎপাদন এমনিতেই প্রায় ৫ মিলিয়ন টন কম হয়েছে। যদি ২৩-২৪-এর শীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটে, যার সম্ভবনা প্রবল, তা হলে ফের বড় রকমের ধাক্কা খাবে গমের ফলন।
চন্দ্র ভূষণ আশংকা প্রকাশ করেছেন, যদি এল নিনো পরের বছরও চলতে থাকে, যা অতীতে বহু বার দেখা গিয়েছে, তা হলে সেটা গিয়ে আঘাত হানবে ২০২৪-এর খরিফ ফসলের উৎপাদনে। অর্থাৎ পর পর দুটো বা তিনটে ফসলে ধাক্কা খাওয়ার আশংকা এখন বাস্তব। অন্যদিকে আগামী এপ্রিল- মে মাসে ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। তাছাড়া সামনেই আছে ৫টি রাজ্যের বিধানসভা ভোট। কতটা প্রভাবিত হবে এই সব নির্বাচন? যদিও এটা ঠিক, ব্যতিক্রম আছে। যেমন ২০১৫-১৬-র এল নিনোর প্রভাব মোটেই কোনও ছাপ ফেলতে পরেনি ভারতীয় রাজনীতির উপর। চন্দ্র ভূষণ লিখেছেন, আবহাওয়া, ফসল উৎপাদন এবং রাজনীতি, এই তিন উপাদানের মধ্যে যে একটা আন্তসম্পর্ক আছে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এবং নির্বাচনকে যে তা প্রভাবিত করে তার সমর্থনেও প্রচুর তথ্য রয়েছে। ফলে আমাদের অবশ্যই নজর রাখতে হবে আগামী নির্বাচনগুলোয় কোনও পরিবর্তন বা পরিবর্তনের কোনও ঝোঁক চোখে পড়ে কি না!
Source link