লেখক দেখিয়েছেন, সভ্যতার আদি যুগে পণ্য লেনদেনের জন্য বার্তার ব্যবস্থার পরিবর্তে বিভিন্ন মূল্যবান বস্তু, তিমি কিংবা হাতির দাঁত, ঝিনুকের কড়ি, পাথরের চাকতি, মানুষের মাথার খুলি, পেরেক, তাস, চা-পাতার আঁটি, বিভিন্ন আকৃতির ধাতব খণ্ড—এসব বিচিত্র ধরনের বস্তু টাকা বা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তারপর আসে ধাতব মুদ্রার নানা ধরন এবং পরিশেষে কাগজের মুদ্রা বা টাকা। এসব ইতিহাস খুব চমকপ্রদভাবে গল্প বলার মতো করে বর্ণনা করেছেন লেখক, যাতে একজন কিশোর নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়তে পারে টাকা বা মুদ্রা আবিষ্কারের ইতিহাসের মতো একটা প্রায় আকর্ষণহীন বিষয়ের মধ্যে।
মুদ্রার ক্রমবিবর্তন এবং আধুনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনার পর লেখক কিশোর পাঠকদের নিয়ে যান ব্যাংকিংয়ের জগতে। এই বিষয় নিয়েও শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায় না বলে প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব, ইতিহাস ও ভূমিকা, ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে বিভিন্ন শ্রেণি ও মহলের ভূমিকা ইত্যাদির একটা সংক্ষিপ্ত ও মনোগ্রাহী বর্ণনা উপহার দেন লেখক খুদে পাঠকদের। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের ব্যাংকিং সম্পর্কে বইটিতে রয়েছে সংক্ষিপ্ত তথ্যবহুল ইতিহাস। আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্বর্ণকার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা যুক্ত করার ফলে অধ্যায়টি একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেছে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক এটিএম, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা সেবাগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো যুক্ত না করলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনাটা অসমাপ্ত থেকে যেত। সর্বশেষ অধ্যায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিতর্কিত ও বিমূর্ত বিষয়টির অবতারণা করে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন লেখক সিরাজুল ইসলাম কাদির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি চালু হলেও অনেক দেশেই এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি নবতম মাধ্যমটিকে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। অর্থব্যবস্থার সর্বশেষ এই সংযোজনটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বইটির পাঠকশ্রেণি বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটির মূল পাঠক কিশোরশ্রেণি যখন আর্থিক জগতে প্রবেশ করবে, তত দিনে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্বন্ধে একটা ফয়সালায় পৌঁছাবে আরও বেশি দেশ এবং হয়তো বাংলাদেশও। বিষয়টি সম্পর্কে এখনই কিছু ধারণা থাকলে পরিণত বয়সে বর্তমান পাঠকদের এ বিষয়ে বুঝতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
Source link